লেখায় যা যা আছে
রুম হিটার কেন ব্যবহার করবেন
উন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশে রুম হিটার অনেক বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শীতের সকালে নরম রোদ খুব ভালো লাগে। শীতকালে সারাদিন বাইরে রোদের কারণে গরম থাকে। কিন্তু দিন বলুন বা রাত বলুন, বাসার ভিতর সবসময় ঠান্ডা জমে থাকে। আর এজন্যই মানুষ রুম হিটার ব্যবহার করে। শীতে লেপ,কম্বল ব্যবহার করলেও রুম তো আর গরম হয়না। রুম ঠিকই ঠান্ডা থাকে। আর এ কারণেই রুমে হিটার প্রয়োজন হতে পারে আপনার।
গ্রামে ঠান্ডার সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার করতো। কিন্তু শহরে সেই সুযোগ না থাকায় রুম হিটার দিয়েই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে হয়। যদিও গ্রামে এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় রুম হিটার ব্যবহার করার প্রবণতা বেড়েছে।
প্রযুক্তির কারণে এই চমৎকার জিনিসটি এখন সাধ্যের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। আর সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হলো হিটারগুলো ঠান্ডা বা গরম যেকোনো সিজনেই ব্যবহার করা যায়! অনেক হিটারের সাথে ফ্যান দেয়, আবার অনেক রুম হিটার রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে আবহাওয়া কন্ট্রোল করতে পারে। আমরা জানি ইলেকট্রিক পণ্য সচল না রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর রুম হিটারগুলো শীত বা গরমে সবসময় সচল রাখা যায় তাই নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম।
আর রুম হিটারের আরেকটা ভালো ব্যাপার হলো একবার চালু করে রুম গরম হয়ে গেলে অফ করে দিলেও হবে। সেক্ষেত্রে বাইরের ঠান্ডা ভেতরে যেন না ঢুকে তাও খেয়াল রাখতে হবে।
রুম হিটার মূলত শিশু এবং বয়স্কদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঠান্ডা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করে এই দুই বয়সের মানুষকে। যাদের অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা ঠান্ডার এলার্জি রয়েছে তাদের জন্য তো এটা খুব জরুরি। তবে মাঝারি বয়সের লোকদেরও এই সমস্যা হয়। তবে একটু কম।
এই লেখায় ‘জেনে কিনবো‘ এর পক্ষ থেকে দুটি রুম হিটারের সাজেশন্স দেয়া হবে। ভালো লাগলে এই দুটি যন্ত্র দেখতে পারেন।
রুম হিটারের দাম
বাজারে এই ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রটি তিন ধরনের পাবেন। ছোট,মাঝারি এবং বড়। অনেক রকম দামের হিটার পাবেন বাজারে। কমদামী থেকে শুরু করে অনেক দামি হিটারও পাওয়া যায়। আপনি যদি সাধ্যের মধ্যে ভালো হিটার কিনতে চান তাহলে ১ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজারের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
ওয়ালটন,সিঙ্গারের হিটারগুলো ১ হাজার থেকে ২ হাজার ওয়াট পর্যন্ত পাবেন। এগুলোর দাম ৫-১০ হাজারের মধ্যে পাবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো বাজারে দামের তারতম্য হতে পারে। এই লেখাটি মূলত আপনাকে বাজারের মূল্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
কোন কোন ব্রান্ডের রুম হিটার বাজারে জনপ্রিয়?

বাজারে অনেক ভালো ভালো রুম হিটার পাওয়া যায়। কমদামে নিচের রুম হিটারগুলো জনপ্রিয়,
শাওমি রুম হিটার
২৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকায় শাওমির ভালো রুম হিটার পাবেন।
মিয়াকো
মিয়াকোর ভালো রুম হিটারগুলো ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকায় পাবেন।
ক্যামেল
ক্যামেলের রুম হিটারও ৪০০০ টাকা থেকে শুরু করে আরো দামি কিনতে পারবেন।
নোভা
নোভার রুম হিটারগুলো ১ হাজার থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকায়ও পাবেন।
ওশান
ওশানের রুম হিটারগুলো ২ হাজার টাকার আশেপাশে পাবেন।
সনি
সনির ভালো রুম হিটারও ৪ হাজার টাকায় পেয়ে যাবেন।
কমেট
৩ হাজার টাকায় কমেটের ভালো রুম হিটারগুলো পেতে পারেন।
নিউ সনিক
২ হাজার টাকায় নিউ সনিকের রুম হিটার পেতে পারেন।
রোওয়া
রোওয়ার যন্ত্রগুলো ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
ডিলোংহি
৪ হাজার থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকাও ডিলোংহির এই যন্ত্রটি পেতে পারেন।
কোথায় পাবেন রুম হিটার?
এগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক শোরুমে পাবেন। ইলেকট্রনিক শপগুলোতেও পাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন দোকানে বা অনলাইন শপ থেকে কিনতে পারেন।
দুটি চমৎকার রুম হিটারের সাজেশন্স
রুমের হিটার নিয়ে মোটামুটি একটা ধারণা পেলেন এতোক্ষণ। এখন আমি দুটি চমৎকার রুম হিটারের কথা বলবো যেগুলো আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি আপনার কাছেও ভালো লাগবে। তাহলে চলুন সেই দুটি যন্ত্র কি তা দেখে ফেলি।
Camel PTC 2000 রুম হিটার
এই হিটারটি চমৎকার। রিমোট কন্ট্রোলড হিটার এটা। তার সাথে এটার সাউন্ডে কেউ বিরক্ত হবেন না। স্মার্ট একটা হিটার।
তবে এই হিটারটি ১৫×১৫ রুমের জন্য পারফেক্ট। যাদের রুম এই সাইজের বা এর কম তারা এই হিটারটি কিনতে পারেন। তবে আরেকটু বড় রুমও কাভার করতে পারে। তবে বাংলাদেশে রুম সাইজ ১৫×১৫ বা এর আশেপাশের সাইজের রুম হয়ে থাকে বেশিরভাগ।
এই যন্ত্রটি অটোমেটিক টেম্পারেচার আইডেন্টিফাই করে রুমের স্বাভাবিক তামপাত্রায় এডজাস্ট করতে পারে। আবার ম্যানুয়ালিও কন্ট্রোল করা যায়।
এই হিটারের সুবিধাসমূহঃ

- স্মার্ট এবং রিমোট কন্ট্রোল হওয়ায় খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
- টাইমার সেট করা যায়। রুম গরম হবার পর বা একটা নির্দিষ্ট টাইমার ব্যবহার করা যায় যার কারণে ওভারহিটিং সমস্যা হয়না।
- পিটিসি রেজিস্টর থাকায় সেফটি নিয়ে ভাবতে হবেনা। পিটিসি মানে পজিটিভ টেম্পারেচার কোএফিশিয়েন্ট। সহজভাবে বললে তার বা কয়েল ব্যবহার ছাড়াই খুব দ্রুত রুম গরম করতে সক্ষম। তাই এটা এনার্জি এফিশিয়েন্ট। বিদ্যুৎ খরচও কম।
- ভোল্টেজ ২২০ ভোল্ট।
- পাওয়ার ২৯-১০০০-২০০০ ওয়াট। অর্থাৎ তিন লেভেলে পাওয়ার এডজাস্ট করতে পারবেন।
- ওভারহিটিং প্রটেকশন আছে। তাই এই ব্যাপারে সেফ।
- ৪ মিটার দূর থেকে রিমোট দ্বারা কন্ট্রোল করা যায়।
- ৮ ঘন্টা পর্যন্ত টাইমার সেট করা যায়।
- এলসিডি ডিজিটাল ডিসপ্লে আছে। তাই সবকিছু খুব পরিষ্কার মনিটর করা যায়।
- ওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা যায় অথবা টেবিলেও রাখা যায়।
- কম গরম বা বেশি গরম দুই অপশনে ব্যবহার করতে পারবেন।
- ঠান্ডা গরম দুইভাবেই ব্যবহার করা যায় এবং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো এটা দিয়ে কাপড়ও শুকানো যায়! এটার জন্য রেকও আছে সাথে যেটা লাগানো যায় আর খুলেও ফেলা যায়।
- নয়েজ বা শব্দ খুব কম। এটার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবেনা।
এই হিটারের অসুবিধাসমূহঃ
- ভিন্ন সময়ে প্রডিউস হবার কারণে বৈশিষ্ঠ্য একটু এদিক সেদিক হতে পারে।
- ম্যানুয়াল মিজারমেন্টের কারণে ১-৩ সেন্টিমিটার পার্থক্য হতে পারে।
- যেকোনো প্রোডাক্টের মতো এটাও ছবির সাথে পার্থক্য হতে পারে।
তবে এগুলো কোনো সমস্যা না। এই দামে এই প্রোডাক্টটিতে সর্বোচ্চ ভালোটাই পাবেন।
Xiaomi Mi Viomi VXNF01 রুম হিটার
আপনি যদি কমদামে স্মার্ট হিটারের খোঁজ করেন তাহলে এই হিটারটি হতে পারে পারফেক্ট। এটা টাচ করে কাজ করা যায়। ছোট এবং সহজে বহনযোগ্য। নিজের রুম ছাড়াও অন্য যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করার জন্য সাথে নিয়ে যেতে পারবেন!
তবে এই হিটারে শাওমির লগো পাবেন না। কারণ এটি শাওমির একটি ইকোলজিক্যাল চেইন প্রোডাক্ট। তাই এটা নিয়ে ভাবতে হবেনা। শাওমির প্রোডাক্টগুলো এমনিতেই সবার ভালো লাগে। ব্যক্তিগতভাবে আমারও ভালো লাগে।
এই হিটারটি চায়না এবং এশিয়ান কান্ট্রিগুলোতে অনেক জনপ্রিয়। এর মূল কারণ এটা এনার্জি এফিশিয়েন্ট এবং খুব দ্রুত রুম গরম করতে পারে। সিরামিক হিটিং এলিমেন্ট ব্যবহারের কারণে এটা সেফ। এটা অনেক স্টাইলিশ একটা প্রোডাক্ট।
এই হিটারের সুবিধাসমূহঃ
- পিটিসি মেটারিয়াল হিট টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। পিটিসি মানে পজিটিভ টেম্পারেচার কো-এফিশিয়েন্ট। এটার মাধ্যমে তার এবং কয়েল ছাড়াই খুব এফিশিয়েন্টলি দ্রুত রুম গরম করতে পারে। বিদ্যুৎ খরচও কম।
- ওয়াইড এঙ্গেল অসকিলেটিং ডিজাইন হওয়ায় এটা আরো চমৎকার হয়েছে। এটার মাধ্যমে জায়গায় রেখেই সহজে ডানে বায়ে মুভ করানো যায়।
- একটা সুইচে ক্লিক করেই ঠান্ডা বা গরম বাতাস এই দুই মুডে চেঞ্জ করতে পারবেন। গরম না ঠান্ডা এটার জন্য ইন্ডিকেটর লাইটও পাবেন।
- টাচ কন্ট্রোল হওয়ায় অনেক সহজভাবে ব্যবহার করা যায়।
- টিপ ওভার প্রটেকশন থাকায় ওভারহিটিং এর কারণে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।
- একের অধিক প্রোটেকশন সিস্টেম থাকায় এটা আরো সেফ হয়েছে অন্যান্য পণ্য থেকে।
- এটার ওজন ১ কেজিরও কম! মাত্র ৯০০ গ্রামের মতো! বুঝতেই পারছেন সহজে বহনযোগ্য প্রোডাক্ট এটি।
- এর পাওয়ার ৬৬০ ওয়াট। ভোল্টেজ ২২০ ভোল্ট।
- প্রোডাক্টের সাইজ ১১৬এমএম×১১৬এমএম×২১২এমএম।
এই হিটারের অসুবিধাসমূহঃ
- সাইজে ছোট হওয়ায় অনেকে বিরক্ত হতে পারেন।
- শব্দের কারণে বিরক্ত হতে পারেন। তবে রুমের এক কোণে রাখলে এটা তেমন অসুবিধা নাও হতে পারে।
এটার অসুবিধা তেমন চোখে পড়েনি আমার। জিনিস ছোট হলেও ভালো সার্ভিস দেয়। ছোট মরিচের ঝাল বেশি আরকি! দাম কম, কিন্তু খুব ভালো প্রোডাক্ট।
আরো ব্লগ পড়ুন