লেখায় যা যা আছে
লো বাজেট অ্যাকশন ক্যামেরা রিভিউ
অ্যাকশন ক্যামেরা কিনতে গেলে আমরা কনফিউস হয়ে যাই। আর তারা আরো বেশি কনফিউস হোন যাদের বাজেট কম। কারণ বাজেট কম হলেও ভালো প্রোডাক্ট কিনতে চান সবাই। আমিও চাই! কিন্তু বাজেট কম মানে যেকোনো প্রোডাক্টের কোয়ালিটিও কমে যাওয়া। তবে আমি আপনাদেরকে ৫ টা অ্যাকশন ক্যামেরা নিয়ে বলতে যাচ্ছি যা আপনার বাজেটের মধ্যে ভালো পারফরমেন্স দিবে।
আর প্রতিটা ক্যামেরার সাথে ভিডিও টেস্ট যুক্ত করে দিলাম। কষ্ট করে ইউটিউবে সার্চ দিতে হবেনা। যেগুলো আপনার প্রয়োজন আমরাই সেরকম ভিডিও গুলো দিয়ে দিলাম আর্টিকেলের সাথে।
অ্যাকশন ক্যামেরা কি?
অনেকেই অ্যাকশন ক্যামেরা কি তা বুঝেন না। লেখার শুরুতে যারা অ্যাকশন ক্যামেরার কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত নন তাদেরকে সংক্ষেপে একটু বুঝিয়ে নেই।
ডিএসএলআর বা সাধারণ যেকোনো ক্যামেরার মতোই একটা ক্যামেরা হলো অ্যাকশন ক্যামেরা। তবে এই ক্যামেরার পপুলারিটির মূল কারণ এটা খুবই ছোট এবং সহজে যেকোনো জায়গায় সেট করা যায়।
আপনি আপনার মাথায় বা বুকে যেকোনো যায়গায় রেখে ভিডিও শ্যুট করতে পারেন যেটার মাধ্যমে রিয়েলিস্টিক ভিউ পাওয়া যায়। মানে আপনার চোখে যেভাবে দৃশ্য দেখছেন সেভাবে অন্যদেরও দেখাতে পারবেন। অ্যাকশন ক্যামেরা সম্পর্কে এমন ধারণাই এর পপুলারিটির মূল কারণ।
এগুলো মূলত স্পোর্টস বা ফিল্ম বা বিভিন্ন ভ্লগ(Vlog) এ ব্যবহৃত হয়। সাধারণ ক্যামেরা থেকে আলাদা হওয়ায় এর জনপ্রিয়তাও অনেক বেশি! একটি ভিডিও দিলাম যে এই ক্যামেরাগুলো দিয়ে কেমন ভিডিও শ্যুট করা যায়।
৫ টি কম বাজেটের ভালো অ্যাকশন ক্যামেরা
আমি আপনাদেরকে যে ৫ টি ক্যামেরা সাজেশন্স দিবো সেগুলো হলো,
EKEN H9R অ্যাকশন ক্যামেরা

এই ক্যামেরা নিয়ে আমি এর আগেও লিখেছি। তাই এখানে বিস্তারিত কিছু লিখবোনা। আপনারা এই লেখা পড়ে এই অ্যাকশন ক্যামেরার ব্যাপারে জেনে নিতে পারেন।
তবে একেবারেই যে কিছু কথা বলবোনা তা না। এটা সবচেয়ে কম বাজেটে সবচেয়ে সেরা অ্যাকশন ক্যামেরা। এর সাথে আপনি ১০ হাজার টাকা দামের অ্যাকশন ক্যামেরায় যা দেয়না তাও পাবেন! এই দামে এর চেয়ে সেরা অ্যাকশন ক্যামেরা আমার দৃষ্টিতে পড়েনি।
এর ছবির কোয়ালিটি বা ভিডিও কোয়ালিটি নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই। এক কথায় অসাধারণ একটি ক্যামেরা। এই ছোট ক্যামেরায় কি দেয়নি! ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো এই ছোট্ট ক্যামেরাতে একটা ডিসপ্লেও দিয়েছে যেটা ১০ হাজার বাজেটের ক্যামেরাতেও দেয়না।
আমার সাজেশন হবে চোখ বন্ধ করে এই ক্যামেরা নিয়ে নিতে পারেন। দুইবার ভাবার প্রয়োজন নেই আসলে।
ভিডিও ফুটেজ
এর সাথে কি কি পাবেন?
- ক্যামেরা
- হ্যান্ডেল বার
- ব্যাটারি
- মেটাল থিটার
- ২ টি ক্লিপ
- ইউএসবি চার্জার
- হেলমেট মাউন্ট
- ওয়ারলেস রিমোট
- প্রটেক্টিভ ব্যাকডোর। এটার কাজ ওয়াটারপ্রুফ কেইস কে পেছন থেকে লক রাখা।
- ওয়াটারপ্রুফ বক্স/কেইস
- ব্যান্ডেজ
- ইউএসবি ক্যাবল
- থিটার
- ৭ টি মাউন্ট
দাম ৪০০০ টাকা মাত্র!
ThiEYE I60E অ্যাকশন ক্যামেরা
এটা আরেক বিস্ট। কমদামে এই ক্যামেরা ভালো পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম। এটা ৪কে রেজুলেশন পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড করতে সক্ষম। এই ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি যথেষ্ট ডিটেইল থাকে।
মজার বিষয় এটা দিয়ে ৪এক্স পর্যন্ত জুম করতে পারবেন। এমনকি ভিডিও শ্যুট করার মাঝেও জুম বাড়াতে কমাতে পারবেন। কম দামে এই ফিচারটি আসলেই ভালো। এটা দিয়ে ১৭০ ডিগ্রি এঙ্গেল পর্যন্ত ছবি তোলা যায়। এর স্লো মো ফিচারটিও ভালো কাজ করে।
এটাকে খুব দ্রুত রিলিজ করে ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত মুভ করাতে পারবেন। মানে ক্যামেরাটিকে চারদিকে ঘুরানোর ব্যাপারে বলা হচ্ছে। অন্যান্য অ্যাকশন ক্যামেরা ঘুরাতে গেলে একটু বেগ পেতে হয়। এটাতে এই সমস্যা হয়না। সহজে মুভ করানো যায়।
এটা এই দামে বেস্ট বলবো আমি। পারফর্মেন্স যথেষ্ট ভালো। যাদের বাজেট ৬০০০/৬৫০০ এর মধ্যে তারা এই ক্যামেরাটি কিনতে পারেন। যদি বাজেট আরো কম হয় তাহলে EKEN H9R তো আছেই।
ফটো কোয়ালিটি
ফটো কোয়ালিটি ভালোই। আমার পরিচিত যারা ব্যবহার করেছে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলেনি এর কোয়ালিটি নিয়ে। ছবি আলাদা আলাদা তিনটি রেজুলেশনে তুলতে পারবেন,
- ১২ মেগাপিক্সেল (৪০০০*৩০০০)
- ৮ মেগাপিক্সেল (৩২৬৪*২৪৪৮)
- ৫ মেগাপিক্সেল (২৫৯২*১৯৩৬)
ভিডিও কোয়ালিটি
এর ভিডিও কোয়ালিটিও চমৎকার। ৪কে রেজুলেশন প্রোভাইড করা একটা ডিভাইসের ভিডিও কোয়ালিটি খারাপ হবার কথা না নিশ্চয়? অন্যান্য একশন ক্যামেরার টাইমল্যাপস ফিচারও আছে এটাতে।
ভিডিও কয়েকটা রেজুলেশনে শ্যুট করতে পারবেন,
- ৪কে (৩৮৪০*২১৬০) । এই রেজুলেশনে আপনি ৩০ এফপিএস এ শ্যুট করতে পারবেন।
- ২.৭কে (২৬৮৮*১৫২০) । ৩০ এফপিএস রেকর্ডিং হবে।
- ১০৮০পি (১৯২০*১০৮০) । এই রেজুলেশনে আপনি ৬০/৩০ এফপিএসে শ্যুট করতে পারবেন।
- ৭২০পি (১০৮০*৭২০) । এই রেজুলেশনে ১২০/৬০ এফপিএসে শ্যুট করতে পারবেন।
- স্লো মো রেকর্ডিং এ ১০৮০পি তে ৬০ এফপিএস এ রেকর্ড করতে পারবেন আর ৭২০পি তে ১২০ এফপিএস এ রেকর্ড করতে পারবেন।
এই ক্যামেরার সাথে কি পাবেন?
- ক্যামেরা
- ওয়াটারপ্রুফ কেস
- ইউএসবি ক্যাবল
- ৩৬০ ডিগ্রি রোটেটিং কুইক রিলিজ বাকল। এটা দিয়ে ক্যামেরা না নাড়িয়ে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেল পর্যন্ত ঘুরাতে পারবেন।
- ব্যাটারি
এর সাথে এক্সেসরিজ কম দিয়েছে। তবে আপনি যদি শুধু ক্যামেরা ফোকাস করেন তাহলে এই দামে এটা কিনে নিতে পারেন। আর যদি আপনি ক্যামেরার সাথে অন্যান্য এক্সেসরিজকে ফোকাস করেন তাহলে অন্য ক্যামেরা দেখতে পারেন। এই দামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক্সেসরিজসহ ভালো ক্যামেরাটি হলো EKEN H9R।
দাম ৬০০০ টাকা মাত্র!
EKEN H7 Pro
অন্য ক্যামেরাগুলোর তুলনায় এই অ্যাকশন ক্যামেরাটাকে আমি মোটামুটি বলবো। এই ক্যামেরার স্পেসিফিকেশন থেকে শুরু করে এক্সেসরিজ সব কিছুই আগেরগুলোর মতো বা অনেক ক্ষেত্রে কম। কিন্তু এর দাম বেশি!
এই দামে শাওমি ওয়াই আই ২কে ডিভাইসটি অনেক ভালো। তবে শাওমি ওয়াই আই ২কে ক্যামেরাটি ৪কে ভিডিও শ্যুট করতে পারেনা। এবং সাথে তেমন কোনো এক্সেসরিজও দেয়না।
তবে এই লেখা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে যাবেন না। কারণ এর একটা দারুণ জিনিস আছে যেটার জন্য একে এই লিস্টে রেখেছি। সেটা হলো এর ক্যামেরা পারফর্মেন্স আগের দুইটা থেকে অনেক ভালো।
এতে ব্যবহার করা হয়েছে Panasonic 34112 Sensor. যার কারণে অনেক পারফেক্ট ছবি বা ভিডিও শ্যুট করতে পারবেন।
বলছিনা আগেরগুলা খারাপ। শুধুমাত্র একটা দিক থেকে এটা এগিয়ে আছে। কিন্তু অন্য সবদিক দিয়ে কোনোভাবেই আগেরগুলার সাথে তুলনা করে লাভ নেই। একই। তবে দাম অনুযায়ী এক্সেসরিজ খুব কম।
এটাতেও ২ ইঞ্চি টাচ ডিসপ্লে আছে। এই ক্যামেরায়ও আগের গুলোর মতো ১৭০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ছবি উঠে। ১৪ মেগাপিক্সেলের হলেও আগেরগুলোর মতোই বিভিন্ন রেজুলেশনে ছবি তুলতে পারবেন। এটার স্পেসিফিকেশন প্রায় আগেরগুলোর মতো তাই বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গেলাম না।
ভিডিও ফুটেজ
প্যাকেজে যা যা পাবেন
- ক্যামেরা
- রিমোট কন্ট্রোল
- ওয়াটারপ্রুফ কেইস
- হ্যান্ডেল বার
- হেলমেট মাউন্ট
- ক্লিপ ১ টি
- প্রটেকটিভ ব্যাকডোর। এটার কাজ ওয়াটারপ্রুফ কেইস কে পেছন থেকে লক রাখা ।
- ইউএসবি ক্যাবল
- ব্যাটারি
- মাউন্ট
দাম ৬৮০০ টাকা মাত্র!
EKEN H6s 4K Action Cam
এই অ্যাকশন ক্যামেরাটি দাম অনুযায়ী ভালো। তবে এই ক্যামেরাটি আমি স্ট্রংলি সাজেস্ট করবোনা। তার প্রধান কারণ দুইটি। এই দুইটা কারণ হলো,
- এটা দিয়ে শ্যুট করা ভিডিও কোয়ালিটি খুব একটা ভালোনা। ৪কে ভিডিও শ্যুট করা যা কিন্তু জেনুইন কোয়ালিটি মনে হয়নি।
- এন্ড্রোয়েড ডিভাইসে এই ক্যামেরায় শ্যুট করা ভিডিওর সাউন্ড পাবেন না।
তবে এর ভালো একটা দিক হলো,
- এর ছবির কোয়ালিটি দাম অনুযায়ী পারফেক্ট।
- আইপিএস ডিসপ্লে আছে ২ ইঞ্চি ।
- টাইমলেপস রেকর্ডিং হয়।
- রিমোট কন্ট্রোলার আছে।
এর স্পেসিফিকেশন নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।
কারণ এটার সাথে আগেরগুলো মিল পাবেন।
তাই এটার স্পেসিফিকেশন লিখে আপনার বিরক্তির কারণ হবার প্রয়োজন নেই।
আপনার বাজেট যদি ৮০০০ টাকা হয় তাহলে এটা নিতে পারেন। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো এরচেয়ে কমদামে আগেরগুলা যেহেতু পাচ্ছেন সেহেতু এটা কেনার প্রয়োজন নেই। নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
ভিডিও ফুটেজ
এই ক্যামেরা প্যাকেজে যা যা পাবেন
- ক্যামেরা
- ওয়াটারপ্রুফ ক্যামেরা কেইস
- রিমোট কন্ট্রোলার
- মাউন্ট
- ট্রাইপড। এটা বিশাল কোনো ট্রাইপড না। মিনি ট্রাইপড
- ইউএসবি ক্যাবল
- ২ টি হেলমেট মাউন্ট
- ব্যাটারি
দাম ৭৯০০ টাকা মাত্র!
EKEN H5s 4K Ultra HD
এটার ভালো দিকগুলো হলো,
- দারুণ ডিজাইন। অনেক স্মার্ট লেগেছে আমার কাছে
- এন্টি শেকিং টেকনোলজি আছে। ভিডিও করার সময় কাঁপাকাঁপি হবেনা। স্মুথ ভিডিও রেকর্ডিং হয়।
- ছবির কোয়ালিটি খুব ভালো
- রিমোট কন্ট্রোলিং সুবিধা
- সহজভাবে কন্ট্রোল করা যায়
- ২ ইঞ্চি স্ক্রিন আছে
- ব্যাটারি পারফর্মেন্স ভালো
এটার খারাপ দিক,
আমি তেমন কোনো খারাপ দিক পাইনি। তাই একে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে ছোট করবোনা। তবে ক্যামেরা ১২ মেগাপিক্সেল। এটা আরেকটু বাড়াতে পারতো ওরা। কিন্তু আমি এটাকে নেগেটিভ সাইড হিসেবে ধরতে চাইনা। ১২ মেগাপিক্সেল যথেষ্ট।
এর সাথে কি কি পাবেন তা নাহয় বিডিশপে দেখে নিবেন। তবে এই দামে অনেক অনেক এক্সেসরিজ দিয়েছে তারা। ভালো ক্যামেরার সাথে প্রচুর এক্সেসরিজ। আর কি লাগে!
ভিডিও ফুটেজ
দাম ৮৫০০ টাকা মাত্র!
তাহলে এখান থেকে কোনো ক্যামেরা যদি ভালো লাগে কিনে নিতে পারেন।
বিডিশপ রিকমেন্ড করার কারণ ওরা অরিজিনাল প্রোডাক্ট দেয়।
আমি তাদের ক্রেতা হিসেবে স্যাটিসফাইড।
ক্যামেরা মডেল | EKEN H9R | ThiEYE I60E | EKEN H7 Pro | EKEN H6s | EKEN H5s |
দাম | ৪০০০ টাকা | ৬০০০ টাকা | ৬৮০০ টাকা | ৭৯০০ টাকা | ৮৫০০ টাকা |
কম বাজেটের অ্যাকশন ক্যামেরাগুলোর একটা সমস্যা
কমদামের প্রোডাক্ট হলে সবদিক দিয়ে ভালো হয়না। এগুলোর ক্ষেত্রেও একটা খারাপ দিক আছে। লো বাজেটের অ্যাকশন ক্যামেরাগুলো দিয়ে রাতে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন না। ছবি বা ভিডিও কোনোদিকেই ভালো পারফর্মেন্স পাবেন না।
আপনি যদি রাতে এই ক্যামেরাগুলো ব্যবহার করতে চান তাহলে বলবো আপনার বাজেট বাড়িয়ে অন্য অ্যাকশন ক্যামেরা কিনতে হবে। বাজেট বাড়ানো মানে অনেক বাজেট বাড়াতে হবে। আর যদি রাতে শ্যুট করার ব্যাপারে আগ্রহ না থাকে তাহলে এই ৫ টা থেকে যেকোনো একটা কিনে নিতে পারেন।
আমাদের আরো লেখা পড়ুন